বৃহস্পতিবার, ১৯ Jun ২০২৫, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন

তলাবিহীন ঝুড়ি

তলাবিহীন ঝুড়ি

হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন, একাত্তরে নিক্সন প্রশাসনের একজন জাদরেল পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথম জীবনে ইহুদি পরিবারের সন্তান হেনরি কিসিঞ্জার লন্ডনের হাবার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ছিলেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, হেনরি কিসিঞ্জার পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে অর্থ-শস্ত্র ও কূটনৈতিকভাবে মদদ যোগাতে লাগলেন। এমন কি চীনের মত শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্র কে উস্কানি দিতেন। মিস্টার কিসিঞ্জারের বিরোধিতার কারণগুলোর মধ্যে ভারতবিদ্বেষ এবং শেখ মুজিবের সোভিয়েত ঘেষা নীতি তাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এছাড়াও উনার রয়েছে ভীষণ পাকিস্তান প্রীতি ও সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের তোষামোদি ও আনুগত্য।
স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক স্যার কে জাতীয় অধ্যাপক পদে মনোনীত করেন। বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে- আব্দুর রাজ্জাক স্যার লন্ডনে পি এইচ ডি করার সময় কিসিঞ্জারের ছাত্র ছিলেন। আবার মুজিব আমলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর কামাল হোসেন ও কিসিঞ্জারের ছাত্র ছিলেন । এমতাবস্থায় সদ্য স্বাধীন একটি গরিব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বিশ্বের ধনী পরা শক্তি গুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালালেন। এভাবে মুজিব শাসনামলের মাঝামাঝি সময়ে মিষ্টার কিসিঞ্জার ঢাকায় আসলেন। ঢাকা পৌঁছার পূর্বে, উনি ডক্টর কামালকে জানান, উনি আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে রাজ্জাক স্যারকে দেখতে চান এবং উনার সঙ্গে আলাদাভাবে কনফারেন্সের যেন ব্যবস্থা করা হয়। সেই মোতাবেক রাজ্জাক স্যার কে আমন্ত্রণ জানানো হলো। যথা সময় মিষ্টার কিসিঞ্জার ঢাকায় ইন্টারকন্টিনাল হোটেল ৪৫ মিনিটের এক কূটনৈতিক মিশন নিয়ে আসলেন। প্রথমে উনি বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার রাঘববোয়ালদের সাথে ২০ মিনিটের
আলোচনা চালালেন এবং তৃতীয় বিশ্বের এই গরিব দেশটিকে যথাযথ মার্কিন
সাহায্যের আশ্বাস দিলেন। মোটামুটি ওনার আশ^াসে মন্ত্রিসভার সদস্যরা বেশ খুশি। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আব্দুর রাজ্জাক স্যারের অনুগত ছাত্র আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বই থেকে জানা যায়- রাজ্জাক স্যার কিসিঞ্জারের সাথে প্রায় ২৫ মিনিট একান্তে কথাবার্তা চালান। কিসিঞ্জার নাকি রাজ্জাক স্যারকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন তুমি তো এক সময় জিন্নাহর ভক্ত ছিলে এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলে। তখন আঃ রাজ্জাক স্যার বলেন ওটা ছিল সময়ের দাবি। আব্দুর রাজ্জাক স্যার হেনরি কিসিঞ্জারের হাব ভাবে বুঝতে পারলেন যে- উনি মুজিব সরকারের ওপর সন্তুষ্ট নয়। শুধু তাই নয় তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি বিশেষ চুক্তির অধীনে লক্ষ লক্ষ মেট্রিকটন গম সাহায্য হিসেবে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিসিঞ্জারের নির্দেশে লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন গম খাদ্য জাহাজ থেকে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।
তারই ফলশ্রুতিতে ৭৪ এ এদেশে দুর্ভিক্ষ হয়। তখন কটাক্ষ করে বলা হয় তলাবিহীন ঝুড়ি।

 

শাফায়েত জামিল রাজীব
-সম্পাদক
একুশে টাইমস্ নিউজ মিডিয়া

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana